ডালিম (Pomegranate) এটি গুল্ম জাতীয় গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Punica granatum। এটি Lythraceae পরিবারের Punica গণের অন্তর্ভুক্ত ফলের গাছ।সংস্কৃত এবং নেপালি ভাষায় বলা হয় দারিম। ডালিম গাছ ৫-৮ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। পাকা ফল দেখতে লাল রঙের হয় । ফলের খোসার ভিতরে স্ফটিকের মত লাল রঙের দানা দানা থাকে । সেগুলি খাওয়া যায় ।এর আদি নিবাস ইরান এবং ইরাক। ককেশাস অঞ্চলে এর চাষ প্রাচীনকাল থেকেই হয়ে আসছে। ডালিম ফলের মোট ওজনের বৃহত্তর অংশই খোসা ও বীজ। নিয়মিত পরিচর্যা নিলে ডালিম গাছ থেকে সারা বছর ফল পাওয়া যায়। ডালিম বাংলাদেশ সহ তুরস্ক, ইরান, সিরিয়া, স্পেন, আজারবাইজান, আর্মেনিয়া, আফগানিস্তান, ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, লেবানন, মিশর, চীন, বার্মা, সৌদি আরব, ইসরাইল, জর্ডান, ফিলিপাইন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শুস্ক অঞ্চল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল, দক্ষিণ ইউরোপ এবং ক্রান্তীয় আফ্রিকায় ব্যাপকভাবে চাষ করা হয়। ডালিমগাছের পাতা, ছাল, মূল, মূলের ছাল সবই ওষুধি হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
রাসায়নিক উপাদান :
ডালিমে রয়েছে বিউটেলিক এসিড, আরসোলিক এসিড এবং কিছু আ্যলকালীয় দ্রব্য যেমন- সিডোপেরেটাইরিন, পেপরেটাইরিন, আইসোপেরেটাইরিন, মিথাইলপেরেটাইরিন প্রভৃতি মূল উপাদান রয়েছে। এবং এতে আরো রয়েছে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। যা আমদের শরীরে রক্তের মধ্যে মোনোসাইট কেমোট্যাকটিক প্রোটিন ক্ষতিকর পদার্থ কমিয়ে ফেলে।যা বিভিন্ন রোগ সারাতে সাহায্য করে।
পুষ্টিগুণ :
ডালিমে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি রয়েছে। কারন প্রতি ১০০ গ্রাম ডালিমে ৭৮ ভাগ পানি , ১.৫ ভাগ আমিষ, ০.১ ভাগ স্নেহ, ৫.১ ভাগ আঁশ, ১৪.৫ ভাগ শর্করা, ০.৭ ভাগ খনিজ, ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম, ১২ মিলিগ্রাম ম্যাগনেসিয়াম, ১৪ মিলিগ্রাম অক্সালিক এসিড, ৭০ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩ মিলিগ্রাম রাইবোফ্লাভিন, ০.৩ মিলিগ্রাম নায়াসিন, ১৪ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি ইত্যাদি থাকে।
উপকারিতা :
১। কোন স্হান কেটে গেলে ডালিম ফুল বেঁটে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে চেপে ধরলে রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায়। ফুল না পেলে পাতাও ভালো কাজ করে।
২। আমাশয় হলে ডালিমের খোসা পানি দিয়ে সেদ্ধ করলে সেই পানি খেলে আমাশয়ে উপকার পাওয়া যায়।
৩। ডালিমে প্রচুর পরিমানে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট থাকে তাই ডালিম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৪। ডালিম গাছের পাতা বেটে মধু ও দই একসাথে মিশিয়ে সেবন করলে গর্ভপাতের আশংকা দূর হয়।
৫। ডালিম গাছের মূল বা শিকড় থেকে ছাল নিয়ে চূর্ন করে পানির সাথে মিশিয়ে সেবন করলে কৃমি ভালো হয়।
৬। শিশুদের পেটের সমস্যা হলে ডালিম গাছের শিকড় থেকে ছাল নিয়ে গুঁড়ো করে মধুর সাথে মিশিয়ে সেবন করালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
৭। নিয়মিত ডালিম খেলে রক্তবৃদ্ধি হয়।
৮। ডালিম দেহের ক্যান্সার প্রতিরোধে করে।
৯। ডালিমের মূল চূর্ণ করে মধুর সাথে মিশিয়ে খেলে বদহজম ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
১০। ডায়রিয়া হলে সকাল-বিকাল ডালিমের রস খেলে ডায়রিয়া ভালো হয়
১১। সর্দি, কাশি হলে ডালিমের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
১২। ডালিম খেলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পায়। এবং এর রস খুবই ভালো ত্বক পরিষ্কারক হিসেবে কাজ করে।
১৩। খাবারে অরুচি হলে নিয়মিত ডালিমের রস খেলে অরুচি কেটে যায়।