মেথি একটি বর্ষজীবী ও মৌসুমী গাছ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Trigonella foenum-graecum। এই গাছ ৩০-৬০ সেমি( ১২-২৪ ইঞ্চি), এবং পাতা হালকা সবুজ। কিছুটা মোটা ধরনের পাতা সোজা হয়ে ৩ টি একসাথে জন্মায়। এর পাতা শাক হিসাবে খাওয়া হয়। মেথি শাক গ্রাম বাংলার মানুষের প্রিয় খাদ্য। একবার মাত্র ফুল ও ফল হয়। স্ত্রী এবং পুরুষ দুই ধরণের ফুল হয়। রঙ সাধারণত সাদা ও হলুদ হয়ে থাকে। বাদামি-হলুদ বর্ণের প্রায় চারকোনা আকৃতির বীজ হয়। এর শুঁটি জাতীয় ফল, প্রায় ২০- ৩০ মি.মি.লম্বা হয়। প্রতিটি ফলে ১০-২০ টি বীজ থাকতে পারে। মশলা হিসেবে ব্যাপক ব্যবহার ইউনানী, কবিরাজী ও লোকজ চিকিৎসায় বহুবিধ ব্যবহার হয়। এটি পাঁচ ফোড়নের একটি উপাদান। মেথি থেকে ষ্টেরয়েডের উপাদান তৈরি হয়। যে কোন মাটিতেই মেথি জন্মায়। এই গাছ কার্তিক এর শেষ দিকে লাগানো ভালো। এই গাছ ১ ফুট বা ৩০ সে.মি. দূরে দূরে ১-৪ ইঞ্চি গর্ত করে প্রতি গর্তে ২-৩ টি করে বীজ পুঁততে হবে। খেয়াল রাখবেন বীজ যেন বেশি গভীরে না যায়। ফাল্গুনে গাছ শুকিয়ে আসলে জমি থেকে তুলে বাতাসে ঝুলিয়ে রেখে ২/৩ দিন রোদে শুকিয়ে নিয়ে হাতে মাড়াই করে বীজ সংগ্রহ করা যায়।এই গাছ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, ইরাক, ইরান, নেপালে জন্মে। এই গাছ ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
উপকারিতাঃ
১। আমাশয় হলে মেথি গুড়া করে গুলের সাথে খেতে হবে। আর যদি রক্ত আমাশয় হয় সে ক্ষেত্রে দইয়ের সাথে মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
২। বাতের ব্যথা হলে মেথি এবং সমপরিমাণ শুকনো আদা চূর্ণ পরিমাণ মতো গুড়ের সাথে মিশিয়ে প্রতিদিন অল্প পরিমানে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। ঠান্ডাতে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে এক টেবিল চামচ মেথি চিবিয়ে খেলে জ্বর বা ঠান্ডার প্রকোপ কমে আসে।
৪। ডায়াবেটিস এর সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মেথি দিনে দুবার খেতে করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৫। ত্বকের উজ্জলতা ও ব্রণ রোধে মেথি বেটে সেটি মুখে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
৬। খুশকি রোধে ১ কাপ পানিতে ২ টেবিল চামচ মেথি বীজ সারারাত ভিজিয়ে রাখুন সেই পেটে মাথায় দিলে খুশকি ভালো হয়।
৭। মেথি প্রাকৃতিক ফাইবার রয়েছে। তাই প্রতিদিন সকালে মেথি ভেজানো পানি পান করলে ওজন কমতে সাহায্য করে।
৮। মেথিতে রয়েছে স্টেরিওডাল সেপোনিনস নামক একটি উপাদান। এই উপাদানটি মানুষের শরীরের কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর তাই মেথি ভেজানো পানি পান করলে হঠাৎ হার্টের আর্টারি আটকে গিয়ে হঠাৎ করে স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা অনেকাংশে কমে যায়।
৯। রক্তে ধীরে ধীরে জমতে থাকা টক্সিক উপাদানের মাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে শরীরের ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। আর এখানেই মেথি বীজের উপকারি ভূমিকা উল্লেখযোগ্য। মেথি রক্তে ভেসে বেড়ানো টক্সিক উপাদানগুলোকে শরীর থেকে বার করে দেয়। ফলে ক্যান্সার কোষ জন্ম নেওয়ার সম্ভাবনাই কমে যায়। বিশেষ করে স্তন ও কোলন ক্যানসার প্রতিরোধের জন্য মেথি কার্যকর। মেনোপজ হলে নারীর শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন আসে। হরমোনের এই পরিবর্তনের কালে মেথি ভালো একটি পথ্য।
১০। মাতৃদুগ্ধ বাড়াতে ওষুধের বিকল্প হলো মেথি তাই সদ্য মা হওয়া নারীর জন্য মেথি উপকারী।
১১। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে মেথি চিবিয়ে খেলে বা এক গ্লাস পানিতে মেথি ভিজিয়ে রেখে সেই পানি সকাল বেলা পান করলে শরীরের রোগ-জীবাণু মরে। রোগ জীবাণুর মধ্যে বিশেষত উল্লেখযোগ্য হল কৃমি।