ফুলকপি ( Cauliflower) বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় শীতকালীন সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Brassica oleracea। এটি ব্রাসিকেসি পরিবারভুক্ত। পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও ফুলকপি প্রধান সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। মোগল আমল থেকেই ভারতবর্ষে ফুলকপির চাষাবাদ প্রথম শুরু হয়। তবে বাংলাদেশের সর্বত্র ফুলকপির চাষ হয়। ফুলকপি উৎকৃষ্ট পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ উপাদেয় এবং সবার কাছে সমাদৃত। এটি একটি বার্ষিক ফসল যা বীজের মাধ্যমে বংশবিস্তার করে। সাধারণত ফুলকপির ফুল অর্থাৎ সাদা অংশটুকুই খাওয়া হয় আর সাদা অংশের চারপাশে ঘিরে থাকা ডাঁট এবং পুরু, সবুজ পাতা দিয়ে স্যুপ রান্না করা হয় অথবা ফেলে দেওয়া হয়। ফুলকপি খুবই পুষ্টিকর একটি সবজি। এটি রান্না বা কাচা যে কোন প্রকারে খাওয়া যায়, আবার এটি দিয়ে আচারও তৈরি করা যায়। ফুলকপি বাংলাদেশ ও ভারতে জন্মে। ফুলকপি ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণঃ
ফুলকপিতে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। কারন প্রতি ১০০ গ্রাম ফুলকপিতে রয়েছে শক্তি-২৫ কিলোক্যালরি, কার্বোহাইড্রেট-৪.৯৭ গ্রাম , প্রোটিন-১.৯২ গ্রাম , ফ্যাট-০.২৮ , আঁশ-২ গ্রাম, ফোলেট-০.৫৭ মাইক্রোগ্রাম, নিয়াসিন-০.৫০ মাইক্রোগ্রাম, থায়ামিন-০.০৫ , প্যানথানিক এসিড-০.৬৬৭ মাইকোগ্রাম।
উপকারিতাঃ
১। ফুলকপিতে আছে এমন কিছু উপাদান যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। ফুলকপির সালফোরাফেন ক্যান্সারের স্টেম সেল ধ্বংস করতে সাহায্য করে এবং বিভিন্ন ধরনের টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে।
২। হৃদপিণ্ড ভালো রাখতে ফুলকপি বেশ সহায়ক। এর সালফোরাফেন উপাদান রক্ত চাপ কমায় এবং কিডনি ভালো রাখে। তাছাড়া ধমনীর ভিতরে প্রদাহ রোধ করতেও সাহায্য করে ফুলকপি।
৩। সুস্বাস্থ্যের জন্য শরীরে নির্দিষ্ট পরিমাণ দহন হওয়া জরুরি। তবে দহনের পরিমাণ বেড়ে গেলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। সেক্ষেত্রে ক্যান্সার বা এ ধরনের রোগের সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। ফুলকপিতে রয়েছে ‘অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি নিউট্রিয়েন্টস’, যা শরীরের দহন প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
৪। শরীর সুস্থ ও কর্মক্ষম রাখার জন্য সঠিক পরিমাণে পুষ্টির প্রয়োজন। নিয়মিত ফুলকপি খেলে দেহের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণ হয়। ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-সি থাকে। পাশাপাশি আছে ভিটামিন কে, ভিটামিন বি৬, প্রোটিন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফাইবার, পটাসিয়াম ও ম্যাঙ্গানিজ।
৫। ফুলকপিতে আছে কলিন (এটি ভিটামিন বি কমপ্লেক্স সমৃদ্ধ এক ধরনের পানিজাতীয় পুষ্টি উপাদান) ও ভিটামিন-বি, যা মস্তিষ্কের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কলিন মস্তিষ্কের কগনিটিভ প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। অর্থাৎ এতে স্মৃতিশক্তি বাড়ে ও দ্রুত শিখতে সাহায্য করে। এছাড়া বয়সের কারণে স্মৃতিবিভ্রমের সম্ভাবনা এবং শৈশবে টক্সিনের প্রভাবে মস্তিষ্ক দুর্বলতা কমায়।
৬। ফুলকপিতে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও সালফার-জাতীয় উপাদান। যা খাবার হজম প্রক্রিয়ায় সাহায্য করে। তাছাড়া ফুলকপির ফাইবার খাবার হজম হতে কার্যকর ভূমিকা পালন করে।
৭। ফুলকপি আমাদের ফুসফুসকে অনেক জটিল রোগ থেকে রক্ষা করে।
৮। ফুলকপির সালফোরাফেন উপাদান উচ্চ রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে।
৯। ফুলকপিতে রয়েছে ভিটামিন এ তাই নিয়মিত ফুলকপি খেলে দৃষ্টিশক্তি ভালো থাকে।
১০। নিয়মিত ফুলকপি খেলে ওজন নিয়ন্ত্রনে থাকে।