গম (Wheat) একটি তৃণ জাতীয় বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Triticum astivim এবং সংস্কৃত নাম গোধূম। এটি Poaceae গোত্রের অন্তভূক্ত। গ্রীষ্ম ও অবগ্রীষ্মমণ্ডলীয় জলবায়ু সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে শুরু করে নাতিশীতোষ্ণ ও তুন্দ্রাঞ্চলীয় জলবায়ু সমৃদ্ধ অঞ্চলে গম জন্মে। এর চাষের জন্য বার্ষিক বৃষ্টিপাত ১৫-৪৫ ইঞ্চি (৩৮০-১১৪৩ মিলিমিটার) খউব উপযোগী। তবে ১০-৭০ ইঞ্চি (২৫৪-১৭৭৮ মিলিমিটার) বার্ষিক গড়পড়তা বৃষ্টিতেও গম ভালো জন্মে। গম চাষের জন্য উঁচু ও মাঝারি দো-আঁশ মাটি বেশি উপযোগী৷ লোনা মাটিতে গমের চাষ ভালো হয় না। তবে এঁটেল ও এঁটেল-দোঁআশ মাটিতেও গমের চাষ করা যায়। গমের চারা সর্বাধিক দেড় মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। এর গাছগুলো সোজা লম্বা হয়। এর পাতা চেপ্টা এবং অগ্রভাগ ক্রমশ সরু হয়। পাতাগুলো ৫-৯ ইঞ্চি লম্বা এবং ১.২৫ ইঞ্চি চওড়া হয়। গাছের মস্তক বরাবর শীষ হয়। প্রত্যেকটি শস্যের মাথায় লম্বা শুঁয়া থাকে। এদের পুষ্পগুচ্ছ ২-৪ ইঞ্চি লম্বা হয়। ফুলে ৩টি পুংকেশর এবং দুটি গর্ভদণ্ড থাকে। এর দানাগুলির রঙ প্রজাতি ভেদে সাদাটে, হলদে, লালচে বর্ণের হয়ে থাকে। এই দানা শুকিয়ে গুঁড়ো করলে যে সাদা পাউডার তৈরি হয়, তাকে ময়দা বা আটা বলা হয়। গম থেকে রুটি, বিস্কুট, পিঠা, মিষ্টি সুজি, সেমাই, নুডলস ইত্যাদি তৈরি হয়। গম বাংলাদেশ ও ভারত সহ সর্বত্র চাষ করা হয়ে থাকে। গম ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুনঃ
গমে রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। কারণ প্রতি ১০০ গ্রাম গমে রয়েছে আমিষ ১২.১ গ্রাম, শর্করা ৬৯.৪ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৪৮ মিলিগ্রাম, লৌহ ১১.৫ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ২৯ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন বি-১ ০.৪৯ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি-২ ০.২৯ মিলিগ্রাম, আঁশ ১.৯ গ্রাম, খনিজ পদার্থ ২.৭ গ্রাম এবং জলীয় অংশ থাকে ১২.২ গ্রাম।
উপকারিতাঃ
১। গমের রস খেলে লিভার পুরোপুরি সুস্থ থাকে।
২। গমে রয়েছে শক্তিশালী এনজাইম ও বায়ো কেমিক্যাল যা দূষিত টক্সিন, ভারী ধাতু, এমনকি রেডিয়েশন থেকেও আপনার শরীরকে রক্ষা করে।
৩। গম গুড়ো করে প্যাক তৈরি করে মুখে লাগালে ব্রণ ভালো হয়। এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বেড়ে যায়।
৪। গমের রুটি নিয়মিত খেলে আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকবে।
৫। নিয়মিত গম খেলে দাঁতের ক্ষয় রোধ হয়।
৬। গমের রস মাথায় লাগিয়ে ১ ঘন্টা পর ধুয়ে ফেললে মাথার খুশকি ভালো হয়।
৭। গম খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য নিয়ন্ত্রনে থাকে।
৮। গমে থাকা ক্লোরফিল হার্টকে সুস্থ রাখে।
৯। গমের রস গরম করে গাঁটের ব্যাথায় লাগালে ব্যথা কমে যায়।
১০। গমের রসে থাকা ভিটামিন বি মানসিক স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে।