বেগুন | 20fours
logo
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১১:২৭
বেগুন
বেগুন
Desk

বেগুন

বেগুন( Brinjal) একপ্রকারের সবজি। এর বৈজ্ঞানিক নাম  lanum melongena।  বেগুন গাছ প্রায় ৪০ থেকে ১৫০ সেমি দীর্ঘ হয়। পাতাগুলো ঘন এবং প্রায় ১০ থেকে ২০ সেমি দীর্ঘ ও ৫ থেকে ১০সেমি প্রশস্ত হয়। বুনো বেগুন গাছ আরো বড় হতে পারে। বেগুনের ফুল সাদা হতে গোলাপী বর্ণের হয়। পাঁচটি পাপড়ি থাকে। বেগুনের ফল বেগুনী বা সাদা বর্ণের হয়। ফল অনেকটা লম্বাটে নলাকৃতির হয়ে থাকে। ফলের ভিতরে অনেকগুলো নরম বীজ থাকে। বেশ কিছু জাত আছে যা অনেকটা লম্বাটে নলাকৃতির হয়ে থাকে এবং কিছু জাত আছে যেগুলো অনেক মোটা ও বড় আকৃতি এবং গোল হয়। এছাড়াও গ্রামে কৃষকের বিশেষ কিছু বেগুনের জাত (কাটা বেগুন,বল বেগুন)  আছে। জাতগুলোর বৈশিষ্ট হলো গাছ,ডাল, পাতা এবং বেগুনের ফলে অনেক কাটা  থাকে যার ফলে কৃষকের এই বিশেষ বেগুনের জাতগুলো জমির আইলে চারপাশে রোপন করলে ফসলের ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা হয়। বেগুন সারাবছর পাওয়া যায়।বেগুন চাষের জন্য চারা উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। শীতকালীন বেগুন চাষের জন্য শ্রাবণ মাসের মাঝামাঝি হতে আশ্বিন মাস এবং বর্ষাকালীন বেগুন চাষের জন্য চৈত্র মাস পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়। বালি, কমপোষ্ট ও মাটি সমপরিমাণে মিশিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়। সবল চারা পাওয়ার জন্য প্রথমে একটি বীজতলায় বীজ বুনতে হয়। গাছ গজানোর ৮-১০ দিন পর চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় রোপণ করতে হয়। এতে চারা স্বাস্থ্যবান হয়। অতিরিক্ত পানিতে বীজ নষ্ট হয়ে যায়। ভারত ও বাংলাদেশের বিভিন্ন রান্নায় বেগুনের ফল ব্যবহার করা হয়। বেগুন মধুর, তীক্ষ্ণ ও উষ্ণ হয়। সবচেয়ে বেশি জমিতে চাষ করা হয় পাশাপাশি বিদেশেও এর চাহিদা রয়েছে। বেগুন প্রায় সারাবছরই চাষ করা যায়। তবে শীত মৌসুমে ফলন বেশি হয়। এ দেশে বহু জাতের স্থানীয় জাতের বেগুন রয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারত সহ প্রায় সর্বএ বেগুন চাষ করা হয়ে থাকে। বেগুন ঔষধ হিসেবে খাওয়া হয়।

পুষ্টিগুণঃ

বেগুনে প্রচুর পুষ্টি রয়েছে। করন প্রতি ১০০ গ্রাম বেগুনে ১.৪ গ্রাম প্রোটিন, ০.০৩ গ্রাম ফ্যাট, ৪ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৮ গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৭ মিলিগ্রাম ফসফরাস, ০.৩৮ মিলিগ্রাম আয়রন, ১২ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি, ২০ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ১৬ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম থাকে।  

উপকারিতাঃ

১। বেগুন ফাইবার, ভিটামিন বি ১, বি ৬, বি ৩, সি, কে তে ভরপুর থাকে। এছাড়াও এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে বলে বেগুন হৃদপিন্ডের জন্য উপকারী একটি খাবার। বেগুন খেলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায় অনেক ক্ষেত্রে। কোলেস্টেরল হলো চর্বি জাতীয় উপাদান, যা রক্তে জমে যায়। যাদের রক্তে কোলেস্টেরল বেশি থাকে, তারা কোনো রকম দুশ্চিন্তা ছাড়াই খেতে পারে বেগুন। কারণ বেগুনে কোনো চর্বি বা কোলেস্টেরল নেই।

২। বেগুনে পলিফেনল যেমন- ডেলফিনিডিন থাকে। যা ফ্রি র‍্যাযাডিকেলের ক্ষতির হাত থেকে কোষকে রক্ষা করে। এমনকি টিউমারের বৃদ্ধি প্রতিহত করে এবং ক্যান্সার কোষের বিস্তার বন্ধ করতে সাহায্য করে। অন্য উপাদান যেমন- এন্থোসায়ানিন ও ক্লোরোজেনিক এসিড শরীরে শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টিইনফ্লামেটরি প্রভাব ফেলে। ক্লোরোজেনিক এসিড কোষের ভেতরের এনজাইম পরিষ্কার করে, যা ক্যান্সার কোষের মৃত্যুকে উৎসাহিত করে এবং ভাইরাস জনিত রোগ তাড়াতে সাহায্য করে। বেগুন পাকস্থলী, কোলন, ক্ষুদ্রান্ত্র, বৃহদান্তের (এগুলো পেটের ভেতরের অঙ্গ) ক্যানসারকেও প্রতিরোধ করে থাকে। আবার যেকোনো ক্ষতস্থান শুকাতে সাহায্য করে বেগুন।

৩। বেগুন কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

৪। বেগুন খেলে মস্তিষ্কে রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায়।  মস্তিষ্কে বেশি রক্ত প্রবাহিত হলে অক্সিজেনও বেশি পৌঁছে দিতে থাকে। যার ফলে স্মৃতি শক্তি ও বিশ্লেষণ মূলক চিন্তার উন্নতি ঘটে।

৫। বেগুন রয়েছে ফাইবার তাই নিয়মিত বেগুন খেলে হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়।

৬। বেগুনে উচ্চ মাত্রার ফাইবার ও কম দ্রবণীয় কার্বোহাইড্রেট থাকে বলে রক্তের গ্লুকোজ ও ইনসুলিনের মাত্রার সমস্যা আছে যাদের তাদের জন্য উপকারী খাবার। তাই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণের জন্য আপনার খাদ্য তালিকায় রাখতে পারেন বেগুন।

৭। বেগুনে আয়রনও রয়েছে অনেক মাত্রায়, যা রক্ত বাড়াতে সাহায্য করে।

৮। বেগুনে রয়েছে রিব্লোফ্ল্যাভিন নামক উপাদান। এই উপাদান জ্বর হওয়ার পরে মুখ ও ঠোঁটের কোণের ঘা, জিহ্বার ঘা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। তাছাড়া জ্বর জ্বর ভাব দূর করতে সাহায্য করে থাকে।

৯। বেগুনে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম, যা দাঁতকে করে মজবুত, দাঁতের মাড়িকে করে শক্তিশালী। নখের ভঙ্গুরতা রোধ করে। এককথায় শুষ্ক ত্বকের জন্য বেগুন খুবই উপকারী। কারণ বেগুন ত্বকের সিক্ততা প্রদান করে অনেকাংশে।

১০। বেগুনের মধ্যে অনেক খাদ্য গুনাগুন বিদ্যমান থাকে। এই গুন ঋতুস্রাবের সমস্যা সমাধানে অনেক উপকার করে।

১১। বেগুন চিপে রস খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যে দূর হয়।

১২। বেগুনের পিলটিস বাঁধলে ফোড়া দ্রুত ভালো হয়।

১৩। বেগুনের রস খেলে ধুতুরার বিষ নেমে যায়।

১৪। বেগুন খেলে অর্শ রোগে উপকার পাওয়া যায়।

১৫। বেগুনে ভিটামিন এ  রয়েছে তাই বেগুন নিয়মিত খেতে দৃষ্টিশক্তি ভালো।