ওলকচু (Elephant foot yam বা whitespot giant arum বা stink lily) বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Amorphophallus paeoniifolius, এবং এর সংস্কৃত নাম শূরণ। এই কন্দ থেকে বহু সাদা শিকড় বেরোয়। এক একটা ওলের কন্দ এক/দেড় ফুট ব্যাস পর্যন্ত হতে দেখা যায়, গাছ ৩ ফুট পর্যন্ত উচু দেখা যায়, ছএাকার পাতা। এই গণের ২৫ টি প্রজাতি সমগ্র এশিয়া ও আফ্রিকার উষ্ণপ্রধান অঞ্চলে পাওয়া যায়। ভারত শ্রীলংকায় ৭ টি প্রজাতি পাওয়া যায়। ওলকচু বাংলাদেশে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। ওলকচু বাংলাদেশ সহ ভারত, এশিয়া, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকায় ওলকচু চাষ করা হয়। ওলকচুর অনেক উপকারিতা রয়েছে।
পুষ্টিগুণঃ
ওল কচুতে অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে। কারন প্রতি ১০০ গ্রাম ওল কচুতে রয়েছে শক্তি ৭৪ ক্যালোরি পানি ৭৮.৭ গ্রাম, প্রটিন ১.২ গ্রাম, ফ্যাট ০.১ গ্রাম, শক্তিরা ১৫.১ গ্রাম, খাদ্য আঁশ ৪.১ গ্রাম, ফ্যালমিয়াম ৫০ মিলি গ্রাম, আয়রন ০.৬ মিলিগ্রাম, ম্যাসনেশিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৮৪ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৫৯১ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ৯ মিলিগ্রাম,জিঙ্ক ০.২৩ মিলি গ্রাম কপার ০.১৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন ই ১.৪৩ মিলিগ্রাম, যায়ামিন ০.০৬ মিলিগ্রাম, রিবোফ্লাভিন ০.০৭ মিরিগ্রাম, নিয়াসিন ১.১ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি ৬ : ০.২৮৩ মিলিগ্রাম, ফোলেট ২২ এমসিজি, ভিটামিন সি ৪.৫ মিলিগ্রাম।
উপকারিতাঃ
১। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত বের হয় একে পায়রিয়া বলে। পায়রিয়া দেখা দিলে ওল কচু শুকিয়ে নিয়ে মাটির পাতিলের মধ্যে ভরে মুখ ঢাকনা দিয়ে ঢেকে মাটি দিয়ে লেপে পাতিল আগুনে পোড়াতে হয়। যখন কচু পাতিলের মধ্যে পুড়ে ছাই হয়ে যাবে সেই ছাইগুলো নিয়ে একটু লবণ ও সরিষার তেল মিশিয়ে দাঁত মাজলে উপকার পাওয়া যায়।
২। অর্শ হলে ঝলসে পোড়ানো ওল ঘিয়ে মেখে অল্প পরিমান লবণ দিয়ে খেতে হবে। ফলে এ রোগে উপকার পাওয়া যায়।
৩। শোথ রোগ সাধারণত প্রায় ক্ষেত্রে আমের দোষের জন্য হয়ে থাকে, তবে পায়ের দিকে এ শোথ দেখা যায়। এটা কিন্তু কিডনি বা হার্টের দোষে পায়ে যে শোথ হয় সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়, এ ক্ষেত্রে ঝলসানো বা বুনো ওল বেশ উপকারী।
৪। বাতের ব্যথায় ওল পুড়িয়ে থেঁতলে নিয়ে অল্প ঘি অথবা এরেনডার তেল মিশিয়ে সহ্যমতো গরম করে পোটলা বেঁধে ব্যথার জায়গায় সেঁক দিলে যন্ত্রণাটা কমে যেতে পারে।
৫। দাদের ও ছুলির উপর ঘি মেখে পোড়া ওল ঘষলে ভালো উপকার পাওয়া যায়।
৬। ওলকে কুচি কুচি করে কেটে শুকিয়ে নিয়ে মাটির কোনো পাত্রে মুখ বন্ধ করে লেপে সেটা শুকিয়ে নিয়ে পোড়াতে হবে। তারপর সে ওল-পোড়া ছাইকে একটুখানি ঘিয়ের সাথে মিশিয়ে দাঁত মাজলে মুখের ও দাঁতের মাঢ়ির ক্ষত সেরে যাবে।
৭। আমাদের দেশে সর্দি-কাশি একটি কমন রোগ বলা হয়। অনেক সময় সাবধানে থেকেও সর্দি-কাশির হাত থেকে রেহাই পাওয়া যায় না। এ ক্ষেত্রে একটু ওল পোড়া ঝলসানো, নারিকেল কোরা ও ৫-৭ ফোঁটা ঘি মিশিয়ে খেলে সর্দির দোষটা চলে যাবে। ওল কফ দূর করে সত্যি, কিন্তু অতিরিক্ত খেলে যে চুলকানি হওয়ার ভয় থাকে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।