বাঙ্গালী ভোজন রসিক তবে অনেকেই আছেন যারা তাদের ওজন নিয়ে একটু বেশি সচেতন যার ফলে অনেকেই আছেন যারা ভাবে মশলাযুক্ত খাবার খেলে ওজন বেড়ে যায় চটজলদি মুলত এটি একটি ভুল ধারণা। তবে খাদ্যে মশলা ব্যবহার করা আর দোকানে কিনতে পাওয়া মশলাদার খাবারের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে তা মাথায় রাখতে হবে। মুলত আমরা যে খাবার বানাই ,তার স্বাদ আর গন্ধ বাড়াতেই শুধু মশলার ব্যবহার করি না। এর আরও একটি কারণ হল, প্রতিটি মশলার মধ্যে বেশ কিছু ঔষধি গুণ থাকে, যা খাদ্যকে শরীরের জন্য উপযোগী হয়ে উঠতে সাহায্য করে। একই সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেও সাহায্য করে। তাই খাবারে প্রয়োজন মত মশলা ব্যবহার না করা শরীরের জন্য ক্ষতিকারক।
আসুন তাহলে এবার জেনে নেই কোন মশলাগুলো আমাদের ওজন কমাতে সাহায্য করেঃ
১। আদাঃ আদা রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করেএবং একইসঙ্গে আদার মধ্যে মেদ ঝরানোর উপাদান থাকে, যা থার্মোজেনিক নামে পরিচিত। একই ধরনের উপাদান থাকে হলুদ এবং শুঁকনো লঙ্কার গুঁড়োর মধ্যেও। ঠিক এই কারণেই, রান্না ছাড়াও সালাদ, চা ইত্যাদির মধ্যে আদা ব্যবহার করা জরুরি।
২। রসুনঃ রসুন ওজন কমাতে বেশ সহায়ক একটি মশলার উপকরণ। রসুন আমাদের অতিরিক্ত মেদ কমিয়ে ফেলতে সাহায্য করে। ইঁদুরের ওপর গবেষণা করে দেখা গেছে নিয়মিত রসুন খেলে সাত সপ্তাহের মধ্যে অতিরিক্ত ওজন কমানো যায়। যদিও, মানুষের ওপর এই সময় কতটা লাগবে, তা এখনও প্রমাণ করা যায়নি। রসুনের মধ্যে ক্ষতিকারক কোনও উপাদান নেই। তাই রান্নার মধ্যে বেশি পরিমাণে রসুন দিলে তাতে কোনও ক্ষতি হয় না। তাই মাছ, মাংস, সালাদ ছাড়াও সকালে ঘুম থেকে উঠে একটি করে রসুন খাওয়া শরীরের জন্য খুবই উপকারি।
৩। হলুদঃ হলুদ রান্নায় ব্যবহার করা হয় রঙের জন্য কিন্তু আপনি কি জানেন এই হলুদের রয়েছে ব্যপক গুন। হলুদ দেহের অতিরিক্ত মেদ ঝরাতে দারুণ কাজ দেয়। ২০০৯ সালে টাফট বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা ইঁদুরের ওপর একটি গবেষণা চালান। সেখানে ইঁদুরদের কারকিউমিন খাওয়ানো হয়। এই কারকিউমিন হল হলুদের মধ্যে উপস্থিত এক ধরণের উপকারি উপাদান। আর অন্য কয়েকটি ইঁদুরকে কারকিউমিন খাওয়ানো হয় না। পরীক্ষাটি চলাকালীন দেখা যায় হলুদ হল উষ্ণতা সৃষ্টিকারী একটি মশলা, যা শরীরের ভেতর উৎসেচকের মাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও, হলুদের আরও বহু রকমের স্বাস্থ্যকর দিক রয়েছে। যেমন- হরমোনের ভারসাম্য বজায় রাখতে পারে এবং অ্যালঝাইমার সারাতে পারে। এছাড়াও, বহু ধরণের উপকার হলুদ করে থাকে। তাই নিয়ম করে হলুদ রান্নায় মেশানো খুবই উপকারি।
৪। জিরা ও দারুচিনিঃ সাম্প্রতিক অতিরিক্ত ওজন সম্পন্ন মহিলাদের ওপর একটি সমীক্ষা করা হয়। এতে প্রমাণ হয় যে, প্রতিদিন এক চা চামচ করে জিরা খেলে অত্তিরিক্ত মেদ তিন গুণ হারে কমে যায়। পৃথিবীর সর্বত্র জিরা খাদ্য তৈরিতে প্রধান উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হয়। প্রথমত, জিরা খাবারের মধ্যে সুগন্ধের সৃষ্টি করে। একইসঙ্গে এর খাদ্যগুণও শরীরের জন্য দারুণ উপকারি। তাই প্রতিদিন খাবার তৈরি করতে হলে তারমধ্যে অবশ্যই জিরা দিয়ে রান্না করুন। সেই সাথে দারুচিনির ও রয়েছে ব্যপক গুন। দারুচিনি রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে, অতিরিক্ত খিদে কমাতে সাহায্য করে এবং অনেকক্ষণ পেট ভরা থাকতে সাহায্য করে। তাই প্রতিদিন নিয়ম করে ওটমিল, দই ইত্যাদির সঙ্গে দারুচিনি মিশিয়ে খাওয়া খুবই উপকারি।
৫। মরিচের গুঁড়োঃ মুলত যারা ঝাল খেতে পছন্দ করে তাদের কাছে মরিচ গুড়ো পছন্দীয় মশলা তবে মরিচ শুধু ঝাল নয় এটা আপনার শরীরের জন্য উপকারী অনেকেই আছেন যারা শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো খানই না। আবার অনেকের ধারণা শুঁকনো মরিচের গুঁড়ো শরীরের জন্য খুবই খারাপ। তবে এগুলো খুব ভুল ধারণা। তার কারণ, হলুদের মতো মরিচের গুঁড়োও আমাদের শরীরের ভেতর তাপমাত্রা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। একইসঙ্গে দেহে উৎসেচকের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। শুকনো মরিচ কোনও একটি খাবারে মেশালে তা ১০০ ক্যালোরি অবধি কমাতে সাহায্য করে।
তাহলে এখন জেনে গেলেন তো মশলা আপনার ওজন বাড়ায় না বরং আপনার ওজন কমাতে সহায়ক। তাই রান্না আর স্বাদ এবং সুবাশহীন নয় মশলা ব্যবহার করুন এবং সুস্বাদু রান্না খান এবং সুস্থ থাকুন তবে অতিরক্ত কিছুই ভালো নয় তাই অতিরিক্ত মশলাদার খাবার না খাওয়াই ভালো।