উদ্ভিদ বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে টমেটো একটি ফল হলেও, সবজি হিসেবেই সারা বিশ্বে টমেটো পরিচিত। সবজি এবং সালাদ হিসেবে ভিটামিন এবং খনিজ সমৃদ্ধ টমেটোর বেশ চাহিদা। ক্ষুদ্র ও মাঝারি চাষীদের জন্য এটি একটি বিশেষ অর্থকরী সবজি। আকর্ষণীয়তা, ভাল স্বাদ, উচ্চ পুষ্টিমান এবং বহুবিধ উপায়ে ব্যবহারযোগ্যতার কারণে সর্বত্রই এটি জনপ্রিয়। এ সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আমিষ, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন-এ এবং ভিটামিন-সি রয়েছে। টমেটোতে লাইকোপেন নামে বিশেষ উপাদান রয়েছে, যা ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। এছাড়াও টমেটোর রয়েছে আরোও অনেক পুষ্টিগুন। আর আজকের লেখাতে থাকছে আপনাদের জন্য টমেটোর পুষ্টিগুণ গুলো।
আসুন তাহলে জেনে নেওয়া যাক টমেটোর পুষ্টিগুণ গুলোঃ
১। চর্মরোগ ও ক্ষতিগ্রস্ত ত্বকের চিকিত্সায় টমেটো কার্যকর
টমেটোতে রয়েছে ভিটামিন সি। এই ভিটামিন সি ত্বকে কোলাজেন তৈরি করে যা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক রক্ষায় সাহায্য করে। এছাড়া চর্মরোগের চিকিত্সাতেও টমেটো কার্যকর। একটি টাটকা টমেটোর রস ত্বকের ক্ষত স্থানে লাগালে উপকার পাওয়া যায়।
২। টমেটো ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
টমেটোতে রয়েছে উচ্চ পরিমাণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট। যেমন- লাইকোপিন। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট দেহের ফ্রি রেডিকেলস দূর করে এবং ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি কমায়। আমাদের শরীরের ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হলে ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। টমেটোর কারণে ডিএনএ সহজে ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। বিশেষজ্ঞদের মতে, টমেটোর লাইকোপিন’ ফুসফুস, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয়, কোলন, স্তন, মূত্রাশয়, প্রোস্টেট ইত্যাদি অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।
৩। মুখের ঘা দূর করতে টমেটো কার্যকর
নানা কারণে মুখে আলসার হতে পারে। এই আলসার দেখতে অনেকটা ঘায়ের মতো। মুখের আলসার সারাতে টমেটো ওষুধের বিকল্প হিসেবে কাজ করে। প্রতিদিন টমেটো খাওয়ার অভ্যাস করলে মুখের ক্ষত দূর হয়ে যায়।
৪। টমেটো রক্তস্বল্পতা দূর করে
যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য টমেটো খুব উপকারী। টমেটো শরীরে রক্ত তৈরিতে সাহায্য করে। নিয়মিত টমেটো খেলে রক্তস্বল্পতা দূর হয়।
৫। টমেটো প্রদাহ দূর করে
আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধরনের প্রদাহ বা ইনফ্লামেশনের অন্যতম কারণ টিএনএফ-আলফা। টমেটো টিএনএফ-আলফার পরিমাণ কমিয়ে রাখে। ফলে শরীরে ইনফ্লামেশন বা প্রদাহের মাত্রা কমে। টমেটোর জুস বা চাটনি শরীরের জ্বালাপোড়া দূর করতে সহায়ক।
৬। রক্তের কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে
যাদের রক্তে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরলের মাত্রা বেশি থাকে তাদের নিয়মিত টমেটো খাওয়া উচিত। টমেটো কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তবে রান্নার চাইতে সালাদ কিংবা রস করে খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। কেননা রান্নায় টমেটোর অনেক পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়।
৭। টমেটো হাড়ের জন্যও উপকারী
টমেটোতে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে ক্যালসিয়াম থাকে। ফলে এটা হাড়ের জন্য ভালো এবং অস্টিওপরোসিস রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে। এছাড়া টমেটোর লাইকোপিন হাড়ের ঘনত্ব বাড়ায়।
৮। ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে
টমেটো দেহে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তে সুগারের ভারসাম্য বজায় রাখতেও টমেটো বেশ কার্যকর। এ কারনে নিয়মিত টমেটো খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৯। স্ট্রোক প্রতিরোধে সহায়ক
মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাধাগ্রস্ত হলে স্ট্রোক হওয়ার আশঙ্কা থাকে। টমেটো মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বাড়ায় যা স্ট্রোক প্রতিরোধ করে। যাদের বংশে কারো স্ট্রোকে আক্রান্ত হবার প্রবণতা আছে তারা নিয়মিত টমেটো খেতে পারেন।
১০। মাড়ি থেকে রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সহায়ক
ভিটামিন সি-এর অভাবে মাড়ি থেকে রক্তপাত হতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন একটি করে টমেটো খেলে পনের দিনের মধ্যে মাড়ির রক্তপাত আপনা-আপনি বন্ধ হয়ে যায়। তবে ভিটামিন সি-এর অভাবজনিত কারন না হলে রক্তপাত বন্ধ হবে না। সেক্ষেত্রে চিতিৎসতের পরামর্শ নিতে হবে।