পালং শাক এমারান্থাসি পরিবারভুক্ত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি জনপ্রিয় শাক ও সবজি। বাংলাদেশে শীতকালে এর চাষ হয়। পালং আমাদের দেশে একটি পরিচিত শাক। এটি ভাজি কিংবা ঝোল রান্না করে খাওয়া যায়। পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ পুষ্টি যা আমাদের শরীরকে সুস্থ থাকতে সহায়তা করে। নানারকম অসুখ-বিসুখ থেকে দূরে থাকতে খাবারের তালিকায় রাখতে পারেন এই সবুজ শাকটি।
পুষ্টিগুণঃ
প্রতি ১০০ গ্রাম পালং শাকে প্রোটিন আছে ২.০ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট আছে ২.৮ গ্রাম, আঁশ আছে ০.৭ গ্রাম, আয়রন ১১.২ মি. গ্রাম, ফসফরাস আছে ২০.৩ মি. গ্রাম, অ্যাসিড (নিকোটিনিক) ০.৫ মি. গ্রাম, রিবোফ্লোবিন থাকে .০৮ মি. গ্রাম, অক্সালিক অ্যাসিড থাকে ৬৫২ মি. গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৭৩ মি. গ্রাম, পটাশিয়াম ২০৮ মি. গ্রা, ভিটামিন-এ আছে ৯৩০০ আই. ইউ, ভিটামিন সি ২৭ মি. গ্রা, থায়ামিন আছে .০৩ মি. গ্রা।
এছাড়াও রয়েছে আরোও অনেক গুণ আসুন তাহলে এবার জেনে নেওয়া যাক উপকারীতাঃ
১। ওজন নিয়ন্ত্রণেঃ একাধিক স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয় যে নিয়মিত ১০০ গ্রাম করে সেদ্ধ পালং শাক অথবা এক গ্লাস পলং-এর রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে ডায়াটারি ফাইবারের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। ফলে বহুক্ষণ পেট ভরা থাকে। আর এমনটা হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বারে বারে খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে। আর কম পরিমাণে খাওয়ার কারণে দেহের ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
২। ক্যান্সার থেকে দূরে রাখেঃ পালং শাকে উপস্থিত থাকা ফ্লেবোনয়েড শরীরে ক্যান্সার জন্ম নিতে বাধা দেয়। ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কাও কমে যায়। ফলে এই মরণ রোগটি শরীরের ধারে কাছেও ঘেঁষতে পারে না।
৩। দৃষ্টিশক্তির উন্নতি ঘটেঃ এই শাকটিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে বিটা-ক্যারোটিন, লুটেইন এবং জ্যান্থিন, যা রেটিনার ক্ষমতা বাড়ানোর মধ্যে দিয়ে দৃষ্টিশক্তির উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। শুধু তাই নয়, এই শাকটিতে উপস্থিত ভিটামিন এ আই আলসার এবং ড্রাই আইয়ের মতো সমস্যা কমাতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
৪। চুল পড়া কমায়ঃ অতিরিক্ত হারে চুল পড়ছে নাকি? তাহলে আজ থেকেই চুলের পরিচর্যায় পালং শাককে কাজে লাগাতে শুরু করুন। দেখবেন উপকার পাবেন। আসলে এই শাকটিতে উপস্থিত আয়রন, হেয়ার ফলের মাত্রা কমানোর পাশাপাশি দেহের ভেতরে লোহিত রক্ত কণিকার ঘাটতি দূর করতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। এক্ষেত্রে পালং শাকের রস বানিয়ে ভাল করে চুলে লাগিয়ে কিছু সময় রেখে দিতে হবে, সময় হয়ে গেলে ধুয়ে ফেলতে হবে চুলটা। আর যদি এইভাবে চুলের পরিচর্যা করতে মন না চায়, তাহলে নিয়মিত পালং শাকের রসও খেতে পারেন। কারণ এমনটা করলেও সমান উপকার পাওয়া যায়।
৫। পেশির ক্ষমতা বাড়াতেঃ জার্নাল অব কার্ডিওভাসকুলার নার্সিং- এ প্রকাশিত এক রিপোর্ট অনুসারে পালং শাকের ভেতরে থাকা নানা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, হার্টের পেশির কর্মক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি সারা শরীরজুড়ে ছড়িয়ে থাকা অন্যান্য পেশির শক্তি বাড়াতেও বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। ফলে একদিকে যেমন হাইপারলিপিডেমিয়া, হার্ট ফেলিওর এবং করোনারি হার্ট ডিজিজের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা কমে, তেমনি সার্বিকভাবে শরীরের কর্মক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়।
৬। ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখেঃ আগেও আলোচনা করা হয়েছে যে পালং শাকে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম। এই খনিজ পদার্থটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্র ভারসাম্য ফিরে আসে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। প্রসঙ্গত, পালং শাকে থাকা ফলেটও ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।
এছাড়াও হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি করে। অ্যামাইনো অ্যাসিড হল এমন একটি উপাদান, যা মেটাবলিজম রেট বাড়ানোর মাধ্যমে হজম ক্ষমতার উন্নতিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আর এই অ্যামাইনো অ্যাসিড প্রচুর মাত্রায় রয়েছে পালং শাকে। এবার নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন এই শাকটির রস নিয়মিত খেলে কী হতে পারে।