পপি ( poppy) বর্ষজীবী উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Papaver somniferum। গাছ ৬০ সে.মি.পর্যন্ত উচ্চতা পায়। দীর্ঘ ১০-২০ সে.মি. দণ্ডের আগায় পেয়ালা আকৃতির ফুল ফোটে। পাঁপড়ি ৪ টি। পাতলা গড়ন। ফুলের পরিধি ৫-১০ সে.মি. পাঁপড়ি স্পর্শ করলে রেশমের কাপড়ের মত অনুভূতি হয়। বহু পুংকেশর যুক্ত। অদ্ভুত সুন্দর ফুলগুলো। ফুল, পাতা ও কলি মিলে এক অদ্ভুত সমন্বয়। পাপড়ির গোরায় অনেক সময় কাল দাগ দেখা যায়। ফুলের আশেপাশে মৌমাছি ভীড় করে। গাছের সারা গা’ তীক্ষ্ণ লোমাবৃত, পাতা ভূ-সংলগ্ন ও দীর্ঘ।পাতা ফিকে সবুজ রঙের এবং বেশ সুন্দর আকৃতির, অর্থাৎ ফলক গভীরভাবে খণ্ডিত। খণ্ডসমূহ প্রায় আলাদা ও বিপরীত। পক্ষল বলা যায়। গাছের নিচের দিকের পাতা ছোট ও উপরে ক্রমাগত বড় আকারের হয়। ফল গোলাকৃতি। ভেতরে দানা দানা বীজ। একটি গাছ হতে ১৭,০০০ বীজ পাওয়া যায়। বীজের মাধম্যে বংশ বিস্তার হয়। ফল যখন পরিপক্ব হয় তখন ব্লেড দিয়ে ফলে গায়ে গভীর করে আঁচড় দেওয়া হয়। ফলে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা পর এর ফল থেকে কষ বের হয় এবং চাষীরা তা সংগ্রহ করে এটাই হলো আফিমের কাঁচামাল। এর পর বিভিন্ন রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অন্যান্য উপজাত জৈব রাসায়নিক দ্রব্য বানানো হয়। এটি থেকে হিরোইন ছাড়াও মরফিন পাওয়া যায়, যা ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফুল সাদা, লাল, গোলাপি, হলুদ। ফুলের পাপড়িগুলো রেশমের মতো কোমল।
একই সাথে বিখ্যাত এবং কুখ্যাত একটি গাছ। সুন্দর পপি ফুলের পাশাপাশি এ গাছ থেকে যেমন ওষুধ তৈরির নানা উপাদান পাওয়া যায়, তেমনি এ গাছের ফল থেকেই তৈরি হয় সর্বনাশা মাদক আফিম। পপি গাছের কাঁচা ফলের খোসা কাটলে যে সাদা রস পাওয়া যায় তা ২৪ ঘণ্টা রোদে শুকালে পাওয়া যায় আফিম। এর রং তখন হয়ে যায় কালো বা কালচে বেগুনী। আবার পপি থেকে রস সংগ্রহ করে পার্শবর্তী দেশ ভারত কিংবা মায়ানমারে নিয়ে কৃত্রিম পন্থায় হিরোইন উৎপাদন করা হয়ে থাকে। বাংলাদেশের মাটি ও আবহাওয়া পপি চাষে খুব উপযোগী। বর্ষজীবী শীতকালীন ফুল হিসেবে পপির জনপ্রিয়তা তুঙ্গে। ভালো ফুলের জন্য বীজ আগে টব বা বীজতলায় বপন করে পরে চারা গাছ মাটিতে রোপণ করা ভালো। সাধারণত অক্টোবরে চারা রোপণ করা হয়। দেড় থেকে দুই মাসের মধ্যে ফুল ধরা শুরু করে। এই গাছের ঔষধি গুণাগুণ রয়েছে।
উপকারিতাঃ
১। পপি ফুল হতে তৈরী মরফিন ব্যবহার করলে ব্যথা কমাতে সাহায্য করে।
২। পপি ফুলের মরফিন ব্যবহার করলে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ বা হার্টফেল করার মতো অবস্থায় উদ্বেগ দূর হয়।
৩। পপি ফুলের মরফিন খেলে ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৪।পপি ফুল থেকে পাওয়া মরফিন অস্ত্রোপচারের আগে ব্যবহার করা হয়।
৫। অনেকদিন যাবত কাশি কমতে না চাইলে মরফিন খেলে কাশি সেরে যায়।