মাষকলাই
মাষকলাই একধরনের ডাল জাতীয় শস্য। প্রধানত লিগুমিনসি গোত্রের গুল্ম প্রজাতি vigna mungo থেকেই এই শস্য পাওয়া যায়। প্রায় ৪০ সেমি লম্বা মাষকলাই গাছ খাড়া, আংশিক খাড়া বা গড়ানো হয়। ফুলের রং ফ্যাকাসে হলুদ। শুঁটিগুলি খাড়া বা আংশিক খাড়া; পাকলে হালকা বা গাঢ় বাদামি। বীজ সাধারণত কালো, তবে সবুজও হয়ে থাকে।ভারতীয় উপমহাদেশে এই ডাল জাতীয় শস্যটি সবথেকে বেশি প্রচলিত এবং এই অঞ্চলেই এর ব্যবহারের আধিক্য দেখা যায়। এটি সবুজ সার, আচ্ছাদক শস্য এবং পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহার্য। এর রোগবালাইয়ের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ডাউনি মিলডিউ, রাস্ট, পাতার দাগপড়া রোগ এবং শুঁয়োপোকার প্রকোপ। মাষকলাই ডাল বিভিন্ন ভাবে রান্না হয়। মাছ-মাংস-সবজি—এসবের সঙ্গে এ ডালযোগে রান্না হয়। দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে এর চাষ বেশি হয়ে থাকে। মাষকালাই বনেও জন্মে, তবে এঁটেল মাটিতে ভাল ফলে। খরাসহিষ্ণু এই ডাল বর্ষা ও শীত মৌসুমের ফসল। ধানের সঙ্গে প্রায় পর্যায়িক চাষে এবং কখনও কখনও মিশ্রচাষেও ফলানো হয়। অগভীর চষা জমিতেই ভাল ফলন দেয়, গভীর চষা জমিতে ফলের বদলে ডালপালাই বেশি বাড়ে। ফসল পাকে ৮০-১২০ দিনের মধ্যে। ফলন হেক্টর প্রতি প্রায় ৭১৪ কেজি শুকনো ডাল। মাষকালাই ডাল বাংলাদেশ ও ভারতের সর্বত্র জন্মে। মাষকালাই ডালের অনেক পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে। তাই এই ডাল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
পুষ্টিগুণঃ
মাষকলাই ডালে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। কারন প্রতি ১০০ গ্রামে মাষকালাইয়ে রয়েছে ক্যালরি ৩৪১, পটাসিয়াম ৯৮৩ মি. গ্রা., প্রোটিন ২৫ গ্রাম, সোডিয়াম ৩৮ মি.গ্রা., কেলসিয়াম ১৩৮ মি. গ্রা., আয়রন ৭.৫৭ মি. গ্রা.।
উপকারিতাঃ
১। মাষকালাইয়ে প্রচুর লৌহ বা আয়রন আছে বলে এটি স্বাস্থ্যকর ডাল। তাই এই ডাল শরীরে বল বৃদ্ধি করে, শরীরকে সক্রিয় রাখে।
২। এই ডালে প্রচুর ফাইবার আছে বলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৩। নিয়মিত মাষকালাই ডাল খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য ভালো হয়।
৪। হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে মাষকলাই ডাল উপকারী। এর পটাশিয়াম রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে। শরীরে কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে এ ডাল খুবই উপকারী। এতে ম্যাগনেশিয়াম থাকায় রক্তপ্রবাহ বাড়ায় এবং হৃদযন্ত্র ভালো রাখতে সাহায্য করে।
৫। মাষকলাই ডাল পানিতে পাঁচ-ছয় ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে ঘি দিয়ে ভেজে খেলে শুক্রবর্ধক সমস্যা ভালো হয়।
৬। পেশির কোষের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে পারে মাষকলাই ডাল। শরীরের বৃদ্ধিতে ডালে থাকা প্রোটিন খুবই দরকারি।
৭। নিয়মিত মাষকালাই ডাল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৮। স্নায়বিক দুর্বলতা, স্মৃতি দুর্বলতা, সিজোফ্রেনিয়ার, হিস্টিরিয়ার মতো সমস্যা দূর করতে পারে মাষকলাই।
৯। মাষকলাই ডাল পিষে প্রলেপ দিলে বাত ব্যথা ভালো হয়।
১০। মাষকলাই ডাল খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১১। মাষকালাই ডাল পিষে মুখে লাগালে ত্বক থেকে ময়লা, মৃত কোষ সরিয়ে ত্বকের সতেজতা ও উজ্জ্বলতা বাড়ে। রোদে পোড়া ত্বকের ক্ষেত্রেও এই ডাল উপকারী। এতে আছে প্রাকৃতিক জীবাণুনাশক ক্ষমতা। তাই মুখের ব্রণ দূর করতে পারে এটি। মুখের দাগ দূর করতেও মাষকলাইয়ের ডালের ব্যবহার দেখা যায়।
১২। মাষকলাইয়ের ডাল মাথায় মাখলে চুল নরম হয়, খুশকি দূর হয়।