Logo
ঢাকা, শুক্রবার, ২৪ জানুয়ারি, ২০২৫
কাউন

কাউন

Desk | আপডেট : ২ ডিসেম্বর, ২০১৮ ১২:৪১
কাউন

কাউন বা কাওন( Foxtail millet) একটি দানা জাতীয় শস্য। এর বৈজ্ঞানিক নাম Setaria italica। এটি পোয়াসি পরিবারের সেটারিয়া গণের একটি সপুষ্পক উদ্ভিদ। কাউনের অন্য নাম কাঙ্গুই বা কাঙ্গু, কোরা, কান্তি, দানা ও শ্যামধাত। ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি বাংলাদেশ প্রচুর চাষ করা হয়। প্রায় সব ধরনের মাটিতে কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোঁআশ মাটিতে এর ফলন ভাল হয়।
কাউনের স্থানীয় জাত ছাড়া বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘তিতাস’ নামের একটি জাত আছে। কাউনের এ জাতটি শিবনগর নামে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং দেশী বিদেশী জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়ণের পর ১৯৮৯ সালে তিতাস নামে অনুমোদন করা হয়। তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন। তিতাস জাতের গাছ মাঝারি লম্বা, পাতা সবুজ , কান্ড শক্ত । গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না । শীষ বেশ লম্বা, মোটা এবং রেশমী। বীজ মাঝারি আকারের এবং ঘিয়ে রংয়ের । হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম । স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশী । জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে । তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন । রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন। খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়। দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য ফেব্রুয়ারী) পর্যন্ত বীজ বোনা যায়।  দেশের দক্ষিণাঞ্চলে সাধারণত অগ্রহায়ণ মাসে বীজ বোনা হয়।  কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টর প্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়।  বীজ সারিতে বুনলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি  রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সেমি রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে। কাউন চাষে সচরাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না । তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টর প্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করলে ফলন বেশী হয়। একটি খরা সহিষ্ণু ফসল । তবে রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশী হয়। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানী দিয়ে দমন করতে হবে।
কাউনের শীষ খড়ের রং ধারন করলে এবং বীজ দাঁতে কাটার পর কট্‌ করে শব্দ হলে বুঝতে হবে  কাটার উপযুক্ত সময় হয়েছে।  কাউনের চাল দিয়ে বিস্কুট, পায়েস, বিরিয়ানি, খিচুরি, সাদা ভাত বানিয়ে খাওয়া হয়। কাউন বাংলাদেশ ও ভারতে প্রচুর পরিমানে চাষ করা হয়ে থাকে। কাউনের চালে অনেক পুষ্টিগুণ  উপকারিতা রয়েছে।

পুষ্টিগুণঃ

কাউনের চালে প্রচুর পুষ্টিগুণ রয়েছে। কাউনের চাল এমন একটি শস্য দানা যাতে প্রচুর পরিমানে আমিষ ও খনিজ লবন। প্রতি ১০০গ্রাম কাউনের চালে ৩৭৮ ক্যালোরি প্রোটিন, ৯ গ্রাম পানি, ৭৩ মিলিগ্রাম কার্বোহাইড্রেট,  ৪ গ্রাম মিনারেল, ৭৭ মিলিগ্রাম ভিটামিন বি, ৩০০ ক্যালোরি ডায়োটরি ফাইবার,  পটাসিয়াম ৬০ গ্রাম। যা আমাদের খাওয়া চালের চেয়ে  ২০ শতাংশ বেশি। এজন্যই একে সুপার ফুড বলা হয়ে থাকে।


উপকারিতাঃ

১।  যেকোন দানাদার খাদ্য উপাদানের চাইতে কাউনের চালে আঁশ অনেক বেশি থাকে। তাই  কাউনের চাউলের যেকোন খাবার বানিয়ে খেলে পাকস্থলী ভালো থাকে।

২।  কাউনের চালে পর্যাপ্ত পরিমাণ ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, জিংক ও আয়রণ থাকার ফলে নারীদের জন্য বিশেষভাবে উপকারি খাদ্য।

৩। কাউনের চালে থাকা কিছু উপকারী উপাদান আমাদের রক্তে মিশে থাকা এল ডি এল বা খারাপ
কোলেস্টেরলের মাএা কমাতে সাহায্য করে।

৪। কাউনের চালে থাকা পটাশিয়াম আমাদের শরীরে লবনের ভারসাম্য বজায় রেখে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে।

৫। কাউনের চালে আঁশ থাকায় এটি আমাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৬। এতে ভিটামিন সি রয়েছে তাই নানা উপকারী খনিজ উপাদান দেহ গঠনে সাহায্য করে।

৭। কাউনে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ আঁশ। আঁশযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পেট অনেক লম্বা সময় পর্যন্ত ভরা থাকে। ফলে ঘনঘন ক্ষুধাভাব দেখা দেয় না। এতে সহজেই ওজন কমানো সম্ভব হয়।

উপরে