জাম
জাম (Java plum, Jambul, Malabar plum) একটি চিরসবুজ ফলদ বৃক্ষ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium cumini। এটি Myrtaceae পরিবারভুক্ত একটি ফল।এর সংস্কৃত নাম জম্বু, জম্বুফল। এবং সমার্থক বাংলা নাম কালোজাম। এটি ভারতবর্ষের আদি গাছ। জাম গাছ প্রায় ৬০ ফুট পর্যন্ত লম্বা হয়। তবে বহু শাখা প্রচুর পাতার কারণে এই গাছ লম্বাটে মনে হয় না। এর বাকল প্রায় ১ ইঞ্চি পুরু হয়। বাকলের রঙ ফিকে ধূসর এবং প্রায় মসৃণ। কাঠের রঙ লালচে বা ধূসর বর্ণের হয়। এই গাছের পাতা গন্ধযুক্ত। কচি পাতা গোলাপি। পাতা বড় হলে তা গাঢ় সবুজ বর্ণের হয়। তবে এর মধ্য শিরা হলদেটে হয়। পাতাগুলো মসৃণ ও চকচকে হয়ে থাকে।মার্চ-এপ্রিলে মাসে এই গাছে ফুল আসে। জামের ফুল গুলো ছোট, সাদা এবং গন্ধযুক্ত। মে-জুন মাসে ফল বড় হয়। ফলটি লম্বাটে ডিম্বাকার। শুরুতে এটি সবুজ থাকে। একটু বড় হলে এর রঙ গোলাপী বর্ণ ধারণ করে। পাকলে কালো বা ঘন কালচে বেগুনি হয়ে যায়। এই ফলের রস বেগুনি। ফলগুলো প্রায় ১ থেকে ১.৫ ইঞ্চি লম্বা হয়। এর ভিতরে একটি লম্বাটে বড় বিচি থাকে। এই গাছ বাংলাদেশ, ভারতের প্রায় সর্বত্র, পাকিস্তান, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কাতে এই গাছ প্রচুর জন্মে। জাম গাছের বীজ, ফল, পাতা ও ছাল বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
জামের পুষ্টিগুন :
জামে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টি। কারন প্রতি ১০০ গ্রাম জামে রয়েছে শর্করা ১৫.৫৬ গ্রাম, চর্বি ০.২৩ গ্রাম, আমিষ ০.৭২ গ্রাম ,পানি ৮৩.১৩ গ্রাম ,থায়ামিন (ভিটামিন বি১) ০.০০৬ মিলিগ্রাম ০% ,রিবোফ্লাভিন (ভিটামিন বি২) ০.০১২ মিলিগ্রাম ১% ,নিয়াসিন (ভিটামিন বি৩) ০.২৬০ মিলিগ্রাম ২%, প্যান্টোথেনিক এ্যাসিড (বি৫) ০.১৬০ মিলিগ্রাম ৩%, ভিটামিন বি৬ ০.০৩৮ মিলিগ্রাম ৩%, ভিটামিন সি ১৪.৩ মিলিগ্রাম ২৪%, ক্যালসিয়াম ১৯ মিলিগ্রাম ২%, লৌহ ০.১৯ মিলিগ্রাম ২%, ম্যাগনেশিয়াম ১৫ মিলিগ্রাম ৪%, ফসফরাস ১৭ মিলিগ্রাম ২% , পটাশিয়াম ৭৯ মিলিগ্রাম ২%, সোডিয়াম ১৪ মিলিগ্রাম ১%।
উপকারিতা :
১। জামের পাতা ও ছালের রস সকালে ও বিকেলে চিনি সহ সেবন করলে অতিসার রোগ নিরাময় হয়।
২। গ্রহনী রোগ হলে জাম গাছের ছালের রসের সাথে ছাগলের দুধ খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। অতিসার রোগে মলের সঙ্গে রক্ত বের হলে জামের ছাল বেটে মধু ও দুধের সাথে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৪। জাম,আমও আমলকি পাতার রস একএে মধু ও দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে আমাশয় ভালো হয়।
৫। অরুচি হলে জাম পাতার রস মিছরির সাথে মিশিয়ে খেলে অরুচি ভাব কেটে যায়।
৬। কচি আম পাতার রস বা ক্বাথ মধুসহ খেলে বমি বন্ধ হয়ে যায়।
৭। জাম গাছের ছাল মিহি গুঁড়ো করে ক্ষতে লাগালে ক্ষত ভালো হয়।
৮। জাম পাতা ও ছালের ক্বাথ তৈরি করে কুলকুচি করলে গলা,মুখ ও জিভের ঘা ভালো হয়ে যায়।
৯। মুখের যে কোন সমস্যা হলে জাম গাছের পাতার রস গরম করে কুলকুচি করলে উপকার পাওয়া যায়।
১০। জামের বীজ শরবত করে খেলে তৃষ্ণা রোগ নিরাময় হয়।
১১। জামে প্রচুর পরিমানে আয়রন থাকে তাই জাম খেলে রক্ত পরিষ্কার থাকে।
১২। জামে ভিটামিন এ ও সি রয়েছে তাই জাম খেলে চোখ ও ত্বক ভালো থাকে।
১৩। জামে রয়েছে অ্যাসট্রিনজেন্ট প্রপার্টি থাকার ফলে জাম ত্বক অয়েল ফ্রি রাখে। এবং মুখের কালো ছোপ দূর হয়।
১৪। জাম নিয়মিত খেলে হার্ট ভালো থাকে।
১৫। জাম রক্তে চিনির মাএা নিয়ন্ত্রনে থাকে তাই জাম খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে।