ফলসা
ফলসা( Phalsa) আমাদের কাছে বুনোফল হিসেবেই পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Grewia asiatica। ফলসা গাছ সাধারণত ৫ থেকে ৭ মিটার পর্যন্ত উঁচু হতে পারে। পাতা খসখসে, রোমশ ও কিনারা দাঁতানো।ফলসা পাকার মৌসুমে সারাদিনই ওদের আনাগোনা চোখে পড়ে। হয়তো আরও অনেক প্রাণী এ ফল খেয়ে বেঁচে থাকে। শুধু ফলের কথা বাদ দিলেও ফলসা গাছ হিসেবেও অনন্য। বড় বড় পাতার এই গাছ ডালপালা ছড়িয়ে ছাতার মতো দাঁড়িয়ে থাকে। সারা বছর তামাটে রঙের নতুন নতুন পাতা এগাছের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।ফলসা মাঝারি আকৃতির পাতাঝরা গাছ। ফলসা আমাদের কাছে বুনোফল হিসেবেই পরিচিত। হালকা হলদে রঙের ক্ষুদ্রাকৃতির ফুল ফোটে মার্চ-এপ্রিলে। আর ফল পাকতে শুরু করে মে-জুন মাসের দিকে। ফল দেখতে অনেকটা মটর দানার মতো, গোলাকার। ফলের কাঁচা রং সবুজ, তখন স্বাদে টক। পাকা ফলের রং কালচে বাদামি, তখন স্বাদ টক-মিষ্টি ধরনের। এই ফলের রস গরমে ক্লান্তিনাশক। তাছাড়া স্কোয়াশ ও অন্য কোমল পানীয় তৈরিতেও কাজে লাগে। গ্রামে একসময় প্রচুর পরিমাণে দেখা গেলেও ইদানীং বেশ দুর্লভ হয়ে উঠেছে গাছটি। একসময় পথের ধারে, পতিত জায়গায় আপনা-আপনিই জন্মাত। বীজ ছড়িয়ে দেয়ার কাজটি করত পাখিরা। এ গাছ খুঁজে পাওয়া অনেকটা সৌভাগ্যের ব্যাপার। এই গাছ বাংলাদেশ, ভারত ও দক্ষিণ এশিয়ায় জন্মে। এই গাছের সবকিছুই ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
পুষ্টিগুণঃ
ফলসা ফলে প্রচুর পুষ্টি উপাদান রয়েছে। কারন প্রতি ১০০ গ্রাম ফলসায় রয়েছে ১.৩ গ্রাম আমিষ, ১৪.৭ গ্রাম শ্বেতসার, ০.৯ গ্রাম চর্বি, ১.১ গ্রাম খনিজ লবন ও ২২ মিলি গ্রাম ভিটামিন সি, ১২৯ মিলি গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৩.১ মিলি গ্রাম, ৪১৯ মিলি গ্রাম কেরোটিন রয়েছ।
উপকারিতাঃ
১। ফলসা ফল এবং ফলসা ফলের রস খেলে লিভার ও গলব্লাডারে উপকার পাওয়া যায়।
২। ফলসা একটি বিস্ময়কর ফল যা হৃদরোগ প্রতিরোধ, রক্ত বিশুদ্ধকরন, রক্তচাপ এবং কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রন করে।
৩। ফলসা খেলে ঠান্ডা এবং কাশি ভালো হয়।
৪। ফলসা ফলের রস খেলে হজমশক্তি বৃদ্ধি পায়।
৫। কেউ রোদে পুড়ে গেলে এবং হিট স্ট্রোক করলে খলসা ফলের রস খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৬। এতে উচ্চমাত্রায় ভিটামিন-সি আছে যা অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিস এবং শ্বাসকষ্ট দূর করতে সাহায্য করে।
৭। এই ফল কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিষন্নতা ও অনিদ্রা দূর করে।
৮। ফলসা গাছের মূলের বাকল বাতের ব্যথ্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৯। ফলসা গাছের পাতা অ্যান্টিবায়োটিকের কাজ করে যা ত্বকের ফুসকুরি বা র্যাশ, অ্যাকজিমা নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
১০। ফলসা ফলে রয়েছে অ্যান্থোসায়ানিন নামক ফ্ল্যাভোনয়েডস যা ক্যান্সারের বিরূদ্ধে সুরক্ষা প্রদান করে।
১১। ফলসা ফল খেলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রনে থাকে।