নাশপাতি
নাশপাতি( Pear) মাঝারি আকৃতির গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Pyrus communis। এটি রোজাসিয়ে পরিবারের পাইরাস গণভূক্ত উদ্ভিদ ও তার ফলবিশেষ। এটি ১০ থেকে ১৭ মিটার পর্যন্ত উচ্চতাসম্পন্ন। প্রায়শঃই এগুলো লম্বা ও সরু আকৃতির হয়ে থাকে। কিছু প্রজাতি গুল্মগুচ্ছের। পাতাগুলো সুবিন্যস্ত, সরল ও সাধারণ মানের যা ২ থেকে ১২ সে.মি. পর্যন্ত লম্বাটে হয় ও সবুজাভ। প্রজাতিভেদেপাতার আকার ডিম্বাকৃতি থেকে শুরু করে সরু ও তীক্ষ্ণ হয়। অধিকাংশ প্রজাতির নাশপাতি গাছই পর্ণমোচী। কিন্তু দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দুই-একটি প্রজাতি চিরহরিৎ প্রকৃতির। শীতল আবহাওয়ায় বিশেষ করে -২৫°সে থেকে -৪০°সে তাপমাত্রায় এরা টিকে থাকে। চীরহরিৎ প্রজাতির নাশপাতি গাছ -১৫°সে তাপমাত্রা পর্যন্ত টিকে থাকতে পারে। এদের ফুলগুলো প্রধানতঃ সাদা হয়। তবে হলুদ কিংবা গোলাপী আকৃতিরও হয়ে থাকে। ফুলগুলোর ব্যাস গড়পড়তা ২-৪ সে.মি. ও পাঁচটি পুষ্পদল রয়েছে। আপেলের সাথে নাশপাতির সম্পর্ক রয়েছে। বন্য প্রজাতির নাশপাতি ফল ১-৪ সেন্টিমিটারবিশিষ্ট। কিন্তু চাষাবাদকৃত কিছু প্রজাতির ফলের দৈর্ঘ্য ১৮ সে.মি. এবং প্রস্থে ৮ সে.মি হতে পারে। ঠাণ্ডা অবস্থায় পাকা নাশপাতিতে চমৎকার সুগন্ধ রয়েছে। এগুলো রসালো তবে গাছে থাকা অবস্থায় ভালভাবে পাকে না। ফলের ৮৩ শতাংশই পানিতে পরিপূর্ণ। আবরণ অংশটি সবুজ অথবা লালচে প্রকৃতির হয়ে থাকে। ফলের কেন্দ্রস্থলটি বেশ নরম। জ্যাম, জেলি অথবা রসালো অবস্থায় বাজারজাতকরণ করা হয়ে থাকে। শক্ত ভূমিতে নাশপাতি গাছ ভাল জন্মে। বাংলাদেশ সহ ইউরোপ, আফ্রিকাএবং এশিয়া মহাদেশে এই গাছ জন্মে। নাশপাতিতে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা রয়েছে।
পুষ্টিগুনঃ
নাশপাতিতে রয়েছে প্রচুর পরিমানে পুষ্টিগুণ। এতে রয়েছে ভিটামিন-এ, বি-১, বি-২, ই, ফলিক এসিড এবং নিয়াসিন নামক পুষ্টিকর উপাদান। এ ছাড়া ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, কপার, আয়রনসহ অন্যান্য মিনারেলের উত্কৃষ্ট উত্স।
উপকারিতাঃ
১। নিয়মিত নাশপাতি খেলে হালকা জ্বর এবং অ্যালার্জি হলে উপকার পাওয়া যায়।
২। নাশপাতিতে উচ্চ মাত্রায় মিনারেল থাকার কারণে দেহে ক্যালসিয়ামের যোগান দেয়। এটি হরমোন উত্পাদন এবং হাড়ের ক্ষয়রোধ করে।
৩। কোষ্ঠকাঠিন্য তাড়াতে নাশপতির জুড়ি নেই। বিকালে বা রাত্রে খাওয়ার পর নাশপাতি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
৪। করোনারি থ্রম্বোসিস, হার্ট ব্লক, মায়োকার্ডিয়াল ইনফ্যাকশন ইত্যাদি রোগে প্রতিদিন ২-৩ টুকরো নাশপতি খেলে খুবই উপকার হয়।
৫। দাঁতের মাড়িতে ক্ষত হলে নাশপাতির রস ও অল্প ফিটকারি মিশিয়ে রেখে সকালে খেলে মড়ির ক্ষয় পূরণ হয়।
৬। খুশকি ও পেটের পীড়ার কারণে মাথার চুল পড়ে গেলে নাশপাতির রস খেলে দ্রুত চুল পড়া ও খুশকি দূর হয়।
৭। নাশপাতি রক্তে অ্যালকোহলের পরিমাণ কমায়। নাশপাতির জুস খায় তাদের স্মরণশক্তি ভালো থাকে এবং আলো কিংবা শব্দের প্রতি সংবেদনশীলতা কমে আসে।
৮। চিকিত্সক ক্রিসটি বলেন, নাশপাতিতে বিদ্যমান পলিফেনল টাইপ-২ ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করে। পলিফেনল রক্তের শর্করার পরিমাণ কমায়। সপ্তাহে পাঁচবারের বেশি নাশপাতি খেলে ইনসুলিনের সংবেদনশীলতা বাড়ে।
৯। নিয়মিত নাশপাতি খেলে চোখ, ত্বক এবং কিডনির সমস্যা দূর হয়।
১০। নাশপাতিতে ফলিক এসিডসহ গর্ভাবস্থার জন্য অন্যান্য উপকারী পুষ্টিগুণ রয়েছে। মহিলাদের বিভিন্ন রোগ সহ মেনোপোজ পরবর্তী বিভিন্ন জটিলতা কাটাতে নাশপাতির জুড়ি নেই।