কাঠ বাদাম
কাঠ বাদাম একটি বৃহদাকৃতির গাছের ফলের বিচি। এর বৈজ্ঞানিক নাম Terminalia catappa। এটি Combretaceae পরিবারের অন্তর্ভূক্ত। বিচির নাম অনুযায়ী এই গাছকে কাঠ বাদাম গাছ ডাকা হয়। কাঠ বাদামের গাছ ৩৫ মিটার (১১৫ ফুট) উঁচু হয়। গাছটির উপরের দিক থেকে আনুভূমিকভাবে ডালপালা বের হয়। এর ফলটি অভ্যন্তরে ৩-৪ সেন্টিমিটার দীর্ঘ কয়েকটি বিচি থাকে যা পরিপক্ক ফল থেকে বের করে নিয়ে সরাসরি বা ভেজে খাওয়া হয়। এই বিচিগুলিই কাঠবাদাম নমে পরিচিত। বিচিগুলো বাদামের গন্ধ যুক্ত। রসালো প্রকারের ও ভেতরের প্রকোষ্ঠে কয়েকটি বিচি থাকে। ফল পাকলে এই বিচিগুলো খাবার যোগ্য হয়। বিচিগুলো খেতে অনেকটা আখরোটের মতো। গাছের বয়স বাড়লে এর উপরের দিকের ডালপালা অনেকটা চ্যাপ্টা হয়ে যায়, দেখতে ফুলদানীর মতো লাগে। শাখাপ্রশাখাগুলো স্তরে স্তরে সাজানো থাকে। পাতাগুলো আকারে বেশ বড়ো, ১৫-২৫ সেমি (৫.৯ - ৯.৮ ইঞ্চি) দীর্ঘ, এবং ১০-১৪ সেমি (৩.৯-৫.৫ ইঞ্চি) চওড়া, ডিম্বাকার, এবং চকচকে সবুজ বর্ণের হয়[১]। শুষ্ক মৌসুমে পাতা ঝরে যায়। ঝরার আগে পাতাগুলো গোলাপী-লাল বা হলদেটে-খয়েরি রঙের হয়ে যায় (এর কারণ হলো ভায়োলাক্সান্থিন, লুয়েটিন ও যিক্সান্থিন নামের রঞ্জক পদার্থ)। এই গাছ বাংলদেশ সহ ভারত, আফ্রিকা থেকে দক্ষিণ ও দক্ষিণপূর্ব এশিয়া সহ অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকায় এই গাছ জন্মে থাকে।
পুষ্টিগুণঃ
কাঠবাদামের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, জিঙ্ক, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম ইত্যাদি উপস্থিত থাকে। এর ফলে, এই প্রকৃতিক উপাদানটি শরীরে প্রবেশ করা মাত্রই নানা দৈহিক সমস্যা যেমন দূর হয়, তেমনই পেটও ভরে।
উপকারিতাঃ
১। কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। মূলত কাঠ বাদামের গায়ে যে খোসা থাকে, তা তৈরি হয় এক ধরণের উৎসেচক দিয়ে। তাই যখন কাঠ বাদাম ভেজানো হয়, তখন এর ভেতরের আদ্রতার জন্য বাদামের খোসা নরম হয়ে যায়। একইসঙ্গে মূল বাদামের অংশটিও বেশ নরম হয়ে যায়। এমন বাদাম খেলে খাবার খুব সহজে হজম হয়ে যায়। আসলে ভেজানো কাঠ বাদামে এক ধরণের উৎসেচক থাকে, যা লিপেস নামে পরিচিত। এটি খাবারে থাকা ফ্যাট এবং অন্যান্য জটিল উপাদান সহজে হজম করতে সাহায্য করে।
২। গর্ভাবস্থায় পানিতে ভেজানো কাঠবাদাম খেলে তা সন্তান এবং মা-দুজনের শরীরই ভাল রাখে। কারণ কাঠবাদাম জলে ভিজিয়ে রাখলে খুব সহজে এর ভেতর থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর উপাদান বেড়িয়ে আসে। ফলে এই বাদাম মা এবং গর্ভস্থ সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষা করতে পারে। এমনকি, সন্তানের নানারকম জন্মগত সমস্যাও দূর করতে পারে ভেজানো কাঠবাদাম।
৩। প্রতিদিন ৪-৬ টি কাঠবাদাম ভিজিয়ে খেলে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতি ঘটে। এরফলে মস্তিষ্কের কাজের উন্নতি ঘটে। শিশুদের বুদ্ধির বিকাশ ঘটাতে এবং শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় উপকারি ফ্যাটের উৎস হিসাবে কাঠবাদাম বিশেষ ভূমিকা রাখে।
৪। পানিতে ভেজানো কাঠবাদাম কোলেস্টেরলের মাত্রা সঠিক রাখতে সাহায্য করে। কাঠবাদামে মোনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল শরীর থেকে বের করে দিতে সাহায্য করে।
৫। নিয়ম করে ভেজানো বাদাম খেলে আমাদের হার্ট ভাল থাকে। এর কারণ হল কাঠবাদামে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভতি উপকারি উপাদান থাকে, যা হার্টের কর্মক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। এছাড়াও কাঠবাদামের মধ্যে থাকা ভিটামিন ই হার্টের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৬। আপনার কি উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা আছে? তাহলে অবশ্যই কাঠবাদাম খান। এর কারণ হল, কাঠবাদামের মধ্যে খুব কম পরিমাণে সোডিয়াম থাকে এবং বেশি মাত্রায় থাকে পটাশিয়াম, যা উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা নিবারণে সাহায্য করে। এছাড়া, কাঠবাদামের ভেতরে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম এবং ফলিক অ্যাসিড রক্ত জমাট বাধার সম্ভাবনা দূর করে।
৭। পানিতে ভেজানো কাঠবাদাম ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। কাঠবাদাম রক্তে শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে বলে ডায়াবেটিসের হাত থেকে সহজে মুক্তি মেলে।
৮। পানিতে ভেজানো কাঠবাদাম নিয়মিত খেলে ওজন খুব তাড়াতাড়ি কমে। কারণ এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে। ফলে কয়েকটি কাঠবাদাম খেলেই পেট অনেকক্ষণ ভরা থাকে এবং অতিরিক্ত খাওয়ার ইচ্ছা থেকে বিরত থাকা যায়। আর কম খেলে যে ওজন কমবেই, তা নিশ্চয় আর আলাদা করে বলে দিতে হবে না।
৯। যারা কোষ্ঠকাঠিন্যের কারণে খুব কষ্ট পান, তাদের জলে ভেজানো কাঠবাদাম খাওয়া উচিত। কারণ কাঠবাদামের মধ্যে যে ফাইবার থাকে, তা শরীরের অপ্রয়োজনীয় বর্জ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। ফলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হতে সময় লাগে না।
১০। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে অথবা মুখে লাগালে ত্বক থাকে চিরনতুন। সেই সঙ্গে ভেজানো কাঠবাদাম বেঁটে যদি মুখে মাখা যায়, তাহলে তা প্রাকৃতিক ক্রিমের মতো কাজ করে। এছাড়াও, ত্বক যদি শুষ্ক হয়, সেই সমস্যা দূর করতেও সাহায্য করে কাঠবাদাম। এক্ষেত্রে কিছুটা ফেটানো ক্রিম, বেঁটে রাখা কাঠবাদামের সঙ্গে মিশিয়ে মাখতে হবে।