জবা
জবা( Hibiscus rosa-sinensis) একটি চিরসবুজ গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। জবা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম. Habiscus rosa- Sinensis Linn। এটি মালভেসি গোত্রের অন্তর্গত। এর উচ্চতা ২.৫-৫ মি(৮-১৬ ফিট) ও প্রস্থ ১.৫-৩ মি(৫-১০ ফিট)। এর পাতাগুলি চকচকে ও ফুলগুলি উজ্জ্বল লাল বর্ণের ও ৫টি পাপড়ি যুক্ত। এই গাছের ফুল নানা রঙ্গের হয়ে থাকে । জবা ফুল ঠোঙ্গা আকৃতি, পঞ্চমুখি ও থোকা আকারের হয়ে থাকে। ফুলগুলির ব্যাস ১০ সেমি(৪ ইঞ্চি) এবং গ্রীষ্মকাল ও শরতকালে ফোটে। বাগানের গাছ হিসেবে। জবাকে গ্রীষ্মমণ্ডল এবং উপগ্রীষ্মমণ্ডল
অঞ্চলে সর্বত্র ব্যবহার করা হয়। যেহেতু জবা ১০°সেলসিয়াসের নীচের তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে না, তাই নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে জবা গাছকে গ্রীনহাউসে রাখা হয়। জবা গাছের বিভিন্ন রকমের সংকর প্রজাতি আছে, যাদের ফুলের রঙ সাদা, হলুদ,কমলা, ইত্যাদি হতে পারে।
দেখতে অনেকটাই সাদামাটা ধরনের আর গন্ধহীন। কিন্তু জবা ফুলের রয়েছে অসাধারণ কিছু স্বাস্থ্য উপকারিতা। এই গাছের ফুল, পাপড়ি ও গাছের ছাল ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এই গাছ বাংলাদেশের সর্বত্র জন্মায়।
১। জবা ফুল নিয়ে বোঁটার সঙ্গে যে সবুজ ক্যালিকাস অংশ থাকে, এই অংশ টাকে বাদ দিয়ে ফুল অংশটাকে পানি ও চিনি পরিমাণমত দিয়ে চটকে শরবত করে দিনে ২/১ বার খেলে বমি বমি ভাব দূর হয়।
২। ঘন ঘন প্রস্রাব হলে জবা গাছের ছালের রস এক কাপ পানির সাথে পরিমাণমত চিনিসহ মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
৩। জবা ফুলের সাথে দারুচিনি এক সঙ্গে বেটে পানির সাথে শরবত বানিয়ে কয়েকদিন খেলে ঋতুকালীন
সমস্যা ভালো হয়।
৪। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল শুধু ক্যান্সার প্রতিরোধই করে না নিয়মিত এই জবা ফুল খেলে আমাদের বয়স বাড়ার প্রবণতাকে ধীর গতি সম্পন্ন করে তুলতে সহয়তা করে। ফলে এই জবা ফুল চিরযৌবন এনে দিতে পারে।
৫। জবা ফুলে রয়েছে প্রাকৃতিক অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি উপাদান এবং ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এই তাই জবা ফুল বেটে লাগালে ব্রণের সমস্যা প্রাকৃতিকভাবেই নির্মূল হয়।
৬। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে নিয়ম করে এই জবা ফুল খেলে শরীরের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে এবং হজমক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে শারীরিকভাবে সুস্থ রাখে। জবা ফুল হজমেও সহায়তা করে।
৭। প্রাকৃতিক গুণসম্পন্ন এই জবা ফুল চুলে বিভিন্ন পুষ্টি প্রদান করে চুল পড়া বন্ধ করে এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা করে উজ্জ্বল আর ঝলমলে করে তোলে। নারিকেল তেলের সাথে জবা ফুল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ফুলটি রোদের তাপে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
৮। জবা ফুলে রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ, সি। যা স্কাল্পের চুলকানি রোধে সাহায্য করে। এছাড়া স্কাল্পের যেকোনো সমস্যা রোধে জবা ফুলের বিকল্প নেই। অল্প পানিতে কয়েকটি জবা ফুল সিদ্ধ করতে হবে। তারপর সেই পানি ঠান্ডা হলে চুলে লাগাতে হবে। এর ফলে দেখবেন স্কাল্পের চুলকানি কমে গেছে।
৯। নারিকেল তেলের সাথে জবা ফুল মিশিয়ে চুলে ব্যবহার করলে চুল কালো হয় এবং চুলের স্বাস্থ্য রক্ষা পায়। প্রাকৃতিকভাবেই এই ফুলটি রোদের তাপে চুল ধূসর হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচায়।
১০। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল দেহের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিক শারীরিক সুস্থতা প্রদান করে।
১১। চুল স্বাভাবিক আছে অথচ ফাঙ্গাসে কিছু জায়গা চুল উঠে টাক হয়ে গেছে এ অবস্থায় জবাফুল বেটে ওখানে লাগালে কিছু দিনের মধ্যে চুল উঠে যাবে। এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন যে কোনো সময় লাগাতে হবে এবং দুই/এক ঘণ্টা রাখতে হবে অথবা যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
১২। চোখের কোণে ক্ষত হয়ে পুঁজ পড়ছে। সে ক্ষেত্রে জবা ফুল বেটে চোখের ভিতরটা বাদ দিয়ে চোখের উপর ও নিচের পাতায় গোল করে লাগিয়ে দিলে উপকার পাওয়া যায়। দিনের যে কোনো সময় এক /দুইটা ফুল বেটে ৭/৮ দিন লাগাতে হবে এবং এক ঘন্টা রাখতে হবে।
১৩। শীত কালে হাতের তালুতে চামড়া উঠে খসখসে হয়ে গেলে জবা ফুল তালুতে মাখলে খুব উপকার পাওয়া যায়। দিনে দুই তিন বার এক /দুইটা ফুল হাতের মধ্যেই ডলে ডলে লাগাতে হবে । লাগিয়ে স্বাভাবিক কাজ কর্ম করা যাবে। যতক্ষণ সম্ভব রাখতে হবে।
১৪। অ্যান্টি অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ জবা ফুল দেহের শারীরিক শক্তি বৃদ্ধি করে এবং প্রাকৃতিক শারীরিক সুস্থতা প্রদান করে।