তোকমা
তোকমা ( pignut বা chan) এক প্রকার গুল্ম জাতীয় সপুষ্পক উদ্ভিদ। এর বৈজ্ঞানিক নাম Hyptis suaveolens একে 'বিলাতি তুলসি', 'গাঞ্জা তুলসি' ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়। এটি প্রজাতি
Lamiaceae পরিবারভুক্ত। স্বাস্থ্য রক্ষায় মূলত ব্যবহার করা হয় তোকমা গাছের বীজ। এই বীজ দিয়ে শরবত তৈরি সহ নানান উপায়ে খাওয়া হয় ভেষজ গুণাবলি পেতে, গুঁড়ো করে ব্যবহার করা যায় রূপচর্চাতেও। বহু গুণ রয়েছে বীজটির।
পুষ্টিগুণঃ
তোকমার দানায় প্রতি ১০০ গ্রামে লৌহ, ক্যালসিয়াম, থিয়ামিন, ম্যাংগানিজ, দস্তা, ফসফরাস, ভিটামিন-বি, ফোলেইট এবং রিবোফ্ল্যাভিন পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। স্বাস্থ্য গবেষকদের মতে, যারা ডায়েট করার জন্য চেষ্টা করে তারা তাদের ডায়েটে হালকা পরিমাণ তোকমা খেতে পারে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং বিপাক প্রক্রিয়াও বৃদ্ধি করে থাকে।
উপকারিতাঃ
১। দেহের ওজন কমাতে এ বীজের জুড়ি নেই। পানিতে কিছুক্ষণ ভিজিয়ে রাখলেই বীজটি ফুলে ওঠে। এরপর সেই পানি কিংবা নানা মসলা দিয়ে তা সুস্বাদু করে পান করা যায়। তোকমার ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড দেহের জন্য অত্যন্ত উপকারী। এ ছাড়া এর নানা উপাদান দেহের চর্বি কমাতে সহায়তা করে। এতে রয়েছে প্রচুর আঁশ, যা বাড়তি ক্ষুধা দূর করে এবং পেট দীর্ঘক্ষণ পরিপূর্ণ থাকার অনুভূতি দেয়।
২। তোকমা গরমকালে দেহের তাপমাত্রা কমাতে সহায়তা করে। আর এ কারণে গরম আবহাওয়ার দেশগুলোতে বহু মানুষ তোকমার শরবত পান করে। এটি সুস্বাদু করার জন্য চিনি, মধু এবং কোথাও কোথাও নারিকেল দুধ দেওয়া হয়।
৩। রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ করতে কার্যকর তোকমা। মূলত দেহের বিপাকক্রিয়া ধীর করে দেয় তোকমা। ফলে কার্বোহাইড্রেটকে গ্লুুকোজে রূপান্তরের পদ্ধতি নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়। এ কারণে টাইপ টু ডায়াবেটিস যাঁদের রয়েছে, তারা এটি নিয়মিত খেতে পারেন।
৪। কোষ্টকাঠিন্য সমস্যা দূর করতে খুবই কার্যকর তোকমা। সামান্য তোকমা অল্প পানিতে ভিজিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর তা দুধে মিশিয়ে খেলেও উপকার পাওয়া যাবে। এটি হজমের সমস্যাও দূর করতে সহায়তা করে।
৫। তোকমা এসিডিটি দূর করতেও কার্যকর। এটি পেটের এসিড নিয়ন্ত্রণ করে জ্বালাপোড়া দূর করে। এ জন্য পানিতে সামান্য তোকমা বীজ ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে। তোকমার বীজ পানিতে পরিপূর্ণ থাকে, যা দেহের ক্ষতিকর পদার্থও দূর করতে সহায়ক।
৬। ত্বকের নানা সমস্যায় তোকমা ব্যবহার করা যায়। এ জন্য কিছু তোকমা বীজ গুঁড়ো করে তা নারিকেল তেলের সঙ্গে মাখিয়ে ত্বকে লাগাতে হয়। এটি নানা চর্মরোগ নিরাময়ে কাজ করে। এটি একজিমা ও সোরিয়াসিস নিরাময়ে কার্যকর। সুস্থ চুলের জন্য এটি নিয়মিত খাওয়া যেতে পারে।
৭। তোকমা বীজে রয়েছে ঠাণ্ডা প্রতিরোধী উপাদান। এটি আপনার দেহকে ঠাণ্ডার বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়তে সহায়তা করবে। সর্দি-কাশি থেকে দূরে থাকতে চাইলে তাই নিয়মিত তোকমা খাওয়া যেতে পারে।
সতর্কতাঃ
# গর্ভবতী নারী ও শিশুরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতীত তোকমা সেবন করবেন না।
# তোকমা অবশ্যই ৭/৮ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখার পর ফুলে উঠলে তারপর সেবন করুন। ঠিক মত ফুলে না উঠলে পেটে ব্যথার কারণ হতে পারে।