আলু
আলু বহুল প্রচলিত উদ্ভিজ্জ খাদ্য। এটি কন্দজাতীয় (tuber) সবজি, যা মাটির নিচে জন্মে। এর আদি উৎস ভারত, এশিয়া মহাদেশ, সেখান থেকে ১৬শ শতকে এটি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। উচ্চ পুষ্টিমান এবং সহজে ফলানো ও সংরক্ষণ করা যায় বলে এটি বিশ্বের সর্বাপেক্ষা প্রচলিত সবজিগুলোর মধ্যে অন্যতম। এটি পৃথিবীর চতুর্থ বৃহত্তম খাদ্যশস্য, এর আগে রয়েছে যথাক্রমে ভুট্টা, গম এবং চাল। বাংলাদেশের সর্বত্র আলু চাষ হয় এবং পাওয়া যায়। এছাড়াও আলুর রয়েছে নানারকম স্বাস্থ্য উপকারিতা।
আলুর পুষ্টিগুণঃ
আলু একটি সুষম ও পুষ্টিকর খাবার। প্রতি ১০০ গ্রাম আলুতে শর্করা আছে ১৯ গ্রাম, খাবার আঁশ ২.২ গ্রাম, উদ্ভিদ প্রোটিন ২ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.৫২ গ্রাম যার মধ্যে পটাশিয়াম লবণই ০.৪২ গ্রাম, এবং ভিটামিন ০.০২ গ্রাম। অপরদিকে ১০০ গ্রাম চালে ৮০ গ্রাম শর্করা, খাবার আঁশ ১.৩ গ্রাম, উদ্ভিজ্জ্জ প্রোটিন ৭.১৩ গ্রাম, খনিজ লবণ ০.২৮ গ্রাম এবং ভিটামিন আছে মাত্র ০.০০২ গ্রাম।
উপকারিতাঃ
১। আলু রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে কম সোডিয়ামযুক্ত খাদ্য খাওয়া প্রয়োজন। কিন্তু তার সাথে প্রয়োজন বেশি পরিমাণে পটাসিয়াম। আলুতে এই দুটি জিনিসই সঠিক পরিমাণে আছে বলে রক্তচাপ সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
২। আলুতে রয়েছে ফাইবার, পটাসিয়াম, ভিটামিন সি ও ভিটামিন বি ৬ যার ফলে কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়। কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ হলে হার্টও সুস্থ থাকে।
৩। আলুতে রয়েছে ফোলেট যা ডি.এন.এ. তৈরী ও মেরামত করতে সাহায্য করে। এর ফলে যেসব কোষগুলি ক্যান্সারের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে, সেগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া আলুতে থাকা ফাইবার কোলন ক্যান্সার মুক্ত করতে সাহায্য করে।
৪। আলুতে থাকে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিঙ্ক, এই সবকটি উপাদান হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্যে উপযুক্ত। ফলে আলু শরীরের গঠন মজবুত করতে সাহায্য করে। এছাড়া আলুতে রয়েছে ফসফরাস যা অস্টিওপরোসিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।
৫। দাঁত বা মাড়ির সমস্যার ক্ষেত্রে ভিটামিন সি বেশ উপযুক্ত। তাই এক টুকরো আলু দিয়ে রোজ দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের নানা সমস্যা থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।
৬। পেটের নানারকম সমস্যা যেমন ডায়রিয়া, ডিসেন্ট্রি বা হজম সমস্যা দেখা গেলে আলু সেদ্ধ করে খেলে বেশ খানিকটা উপকার পাওয়া যায়।
৭। আলুতে যে পরিমাণ ফাইবার ও এন্টি-অক্সিডেন্ট থাকে তা শরীরের ইলেক্ট্রোলাইসিস নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। এর ফলে গা, হাত, পা বা শরীরের কোনো অংশ ফুলে যাওয়া থেকে অনায়াসে মুক্তি পাওয়া যায়।
৮। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের জন্যে কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম ও গ্লুকোজ খুব জরুরি। এর সব কটি উপাদান একসাথে আলুতে থাকার ফলে মস্তিষ্ক স্বাস্থ্যকর রাখতেও আলুর ভূমিকা আছে।
৯। আলু, বিশেষত মিষ্টি আলু ভিটামিন এ ও এন্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। তাই এই আলু নিয়মিত খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
১০। আপনি যদি আপনার ওজন সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে চান তাহলে প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় অল্প পরিমাণ আলু যোগ করতে ভুলবেন না। আলুতে অতি কম পরিমাণে ফ্যাট থাকে যার ফলে পেট ভরা সত্ত্বেও ওজন বেশি বাড়ে না।
১১। আলুতে থাকা ভিটামিন বি, ভিটামিন সি, মিনারেল ও পটাসিয়াম কোলেস্টোরল নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ সাহায্য করে। এর ফলে হার্ট সুস্থ থাকে।
১২। শরীরে সঠিক পরিমাণে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ক্যালসিয়াম আপনার শরীরকে ভারসাম্য ও আরাম প্রদান করে যার ফলে আপনার স্নায়ু শান্ত হয় ও আপনি নিশ্চিন্তে ঘুমোতে পারেন। তাই অনিদ্রা বা কম ঘুমের সমস্যা থাকলে আলু খেলে উপকার পাবেন৷
১৩। আলুতে পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, জিঙ্ক ও ফসফরাস রয়েছে, এসব উপাদান আপনার ত্বকের জন্য অনেক উপকারি।